ঢাকা,বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪

জেলার তিনটি আসনে বিএনপির প্রার্থী চূড়ান্ত

কক্সবাজার প্রতিনিধি ::
দলীয় প্রধানের কারাবাসসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত হলেও নির্বাচনের প্রস্তুতি থেকে পিছিয়ে নেই বিএনপি। ইতোমধ্যে প্রায় ১৭৩ আসনে বিএনপির একক প্রার্থী চূড়ান্ত করার খবর একটি প্রথম সারির জাতীয় দৈনিকে প্রকাশ পেয়েছে। সেখানে কক্সবাজারের তিনটি আসনে একক প্রার্থী থাকলেও মহেশখালী-কুতুবদিয়া আসনটি জোটের শরিক দলের হাতে ছেড়ে দিতে চায় বিএনপি। তবে বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা এই আসনটিতেও দলীয় প্রার্থী চায়।

সূত্রমতে, কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনে ধানের শীষ প্রতীকের চূড়ান্ত প্রার্থী সাবেক প্রতিমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন আহমেদের স্ত্রী হাসিন আহমেদ। এই আসন থেকে ২০০৮ সালেও স্বামীর পরিবর্তে নির্বাচন করে বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছিলেন হাসিনা আহমেদ। এবারও তার (হাসিন আহমেদ) নামই প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত করেছে বিএনপি। তবে নির্বাচনের আগে সালাহ উদ্দিন আহমেদ ভারত থেকে আইনি জটিলতা শেষ করে দেশে ফিরতে পারলে তিনিই (সালাহ উদ্দিন আহমেদ) এ আসনের প্রার্থী হবেন এমনটাও শোনা যাচ্ছে।

জানা গেছে, চকরিয়া-পেকুয়া আসনটি বিএনপির দুর্গ হিসেবে পরিচিত। এই আসনে সালাহ উদ্দিন আহমেদ একাধিকবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এখানে তিনি তুমুল জনপ্রিয়। তার জনপ্রিয়তার তুলনায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে এখনো সেই ধরণের নেতা উঠে আসেনি বলে মনে করে থাকেন রাজনৈতিক বোদ্ধারা। সালাহ উদ্দিন আহমেদের জনপ্রিয়তার উপর ভর করেই ২০০৮ সালে প্রথমবার রাজনীতি ও নির্বাচনের মাঠে নেমে ছক্কা হাকান তার স্ত্রী হাসিন আহমেদ। সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে বিপুল ভোটে পরাজিত করেছিলেন তিনি। এবারও সালাহ উদ্দিন আহমেদ দেশে ফিরতে না পারলে তার স্ত্রী নির্বাচন করবেন এমনটা আগে থেকেই জানে তৃণমূল নেতাকর্মীরা। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা মনে করেন, সুষ্ঠু পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে হাসিন আহমেদ আবারও বিপুল ভোটে জয়ী হবেন।

পেকুয়া উপজেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক কামরান জাহিদ মুকুট বলেন, ‘সালাহ উদ্দিন আহমেদ অবহেলিত পেকুয়া-চকরিয়াকে ১০০ বছর এগিয়ে নিয়ে গেছেন। একারণে তিনি শুধু দলীয় নেতাকর্মীদের কাছে নয়, সর্বস্তরের মানুষের কাছে জনপ্রিয়। এখানকার মানুষের প্রত্যাশা তিনিই (সালাহ উদ্দিন আহমেদ) নির্বাচন করবেন। তবে যদি তিনি দেশে ফিরতে না পারেন তাহলে তার স্ত্রী হাসিন আহমেদই নির্বাচন করবেন।’

কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসনে ধানের শীষ প্রতীকের একক প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত করা হয়েছে বিএনপির কেন্দ্রীয় মৎস্যজীবী বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য লুৎফুর রহমান কাজলকে। এই আসনে তিনি ২০০৮ সালে নিজ দলের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী থাকা স্বত্বেও নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে বিপুল ভোটে পরাজিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। দলের নেতাকর্মীরা মনে করেন, তিনি (কাজল) সদর ও রামু উপজেলার সর্বস্তরের মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন। এই আসনে লুৎফুর রহমান কাজলের বিকল্প নেই। আগামী নির্বাচনে তিনি বিপুল ভোটে জয় লাভ করবেন বলে প্রত্যাশা তাদের। তবে এর জন্য সুষ্ঠু পরিবেশ চায় তারা।

কক্সবাজার সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন জিকু বলেন, ‘কাজল ভাই সর্বদলীয় নেতা হিসেবে স্বীকৃত। তার জনপ্রিয়তার সাথে কারও তুলনা হয় না। গণতান্ত্রিক পরিবেশে ভোট হলে কাজল ভাইয়ের জয় নিশ্চিত।’

কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনে বিএনপির দলীয় একক প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত করা হয়েছে জেলা বিএনপির সভাপতি ও চারবারের নির্বাচিত সাবেক সংসদ সদস্য শাহজাহান চৌধুরীকে। এই আসনের দলীয় নেতাকর্মীরাও তার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ। নেতাকর্মীরা চায়, শাহজাহান চৌধুরীই ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে লড়বেন। এই আসনে তার ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে।

উখিয়া-টেকনাফ আসন থেকে সর্বশেষ ২০০৮ সালে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেছিলেন শাহজাহান চৌধুরী। যদিও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবদুর রহমান বদির কাছে ধরাশয়ী হন। এরপর ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নেওয়াতে শাহজাহান চৌধুরীরও আর নির্বাচনে অংশ নেওয়া হয়নি।

উখিয়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সোলতান মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘শাহজাহান চৌধুরী চারবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য ছিলেন। তিনি উখিয়া-টেকনাফে ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। সুতরাং জনপ্রিয়তা এবং দীর্ঘদিন সংসদ সদস্য থাকার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে তিনি নির্বাচিত হবেন। তবে এর জন্য অবাধ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। নেতাকর্মীরা তার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ রয়েছে।’

এদিকে কক্সবাজার-২ (মহেশখালী-কুতুবদিয়া) আসনটি জোটের শরিকদের হাতে ছেড়ে দিতে চায় বিএনপি। এরজন্য নির্ধারণ করা হয়েছে জামায়াত নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য হামিদুর রহমান আযাদকে। অবশ্য এই ধরণের গুঞ্জন অনেক থেকেই চলে আসছিলো।

তবে বিএনপির একটি সূত্র বলছে, মহেশখালী-কুতুবদিয়া আসনটি জোটের শরিকদের ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত এখনো শতভাগ চূড়ান্ত হয়নি। তাই এই আসনে বিএনপি থেকেও একজন বিকল্প প্রার্থী ঠিক করে রাখা হয়েছে। তিনি হলেন বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচিত সাবেক সংসদ সদস্য আলমগীর মাহফুজউল্লাহ ফরিদ। এই আসনে আলমগীর  ফরিদের তুমুল জনপ্রিয়তা রয়েছে। তবে রাজনৈতিক মারপ্যাচে তিনি এখন চরম কোণঠাসা।

মহেশখালী-কুতুবদিয়া আসনে বর্তমান সরকার ব্যাপক উন্নয়ন করেছে। এই আসনে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা বিএনপির দলীয় প্রার্থী চায়। কেন্দ্রে জোটের বাইরে দলের বিকল্প প্রার্থী হিসেবে আলমগীর ফরিদের নাম রাখলেও মহেশখালী-কুতুবদিয়ার অনেক বিএনপি নেতাকর্মীরা চায়, দলীয় প্রার্থী হিসেবে সালাহ উদ্দিন আহমেদকে (বর্তমানে ভারতে)।

মহেশখালীতে বেশ কিছুদিন ধরে সালাহ উদ্দিন আহমেদের পক্ষে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন মহেশখালী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু বক্কর ছিদ্দিক। গণসংযোগ করতে গিয়ে সালাহ উদ্দিন আহমেদের পক্ষে তৃণমূল নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের ব্যাপক সাড়া মিলেছে বলে জানান আবু বক্কর ছিদ্দিক। তিনি বলেন, সালাহ উদ্দিন আহমেদ চকরিয়া-পেকুয়ার চেহারা পাল্টে দিয়েছেন। কিন্তু মহেশখালী-কুতুবদিয়া অত্যন্ত অবহেলিত। তাই উপকূলের মানুষ চায়, সালাহ উদ্দিন আহমেদ এই আসন থেকে নির্বাচন করুক। নির্বাচিত হয়ে অবহেলিত উপকূলবাসীর ভাগ্য পরিবর্তন করুক। এখন সবার প্রত্যাশা এটি। তবে নেতাকর্মীদের সাথে উপকূলবাসীও এখন দলের সিদ্ধান্তের দিকে চেয়ে আছেন।

জেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক ইউসুফ বদরী বলেন, ২০১৭ সালে রোহিঙ্গাদের দেখতে এসে দলের চেয়ারপার্সন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া চকরিয়া-পেকুয়ায় হাসিনা আহমেদ, সদর-রামুতে লুৎফুর রহমান কাজল ও উখিয়া-টেকনাফে শাহজাহান চৌধুরীকে মাঠে নেমে পড়ার নির্দেশ দেন। ওই দিনই নেত্রী এই তিনজনকে অনেকটা চূড়ান্ত ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। তাছাড়া এই তিন আসনে তারা (হাসিন আহমেদ, কাজল ও শাহজাহান চৌধুরী) ছাড়া বিকল্প নেই। তারা স্ব-স্ব নির্বাচনীয় এলাকায় তুমুল জনপ্রিয়। সুষ্ঠু ও গণতান্ত্রিক পরিবেশে ভোট হলে তিনজনই বিপুল ভোটে জয়ী হবেন।

মহেশখালী-কুতুবদিয়া আসনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তৃণমূল তথা কক্সবাজারের বিএনপি পরিবার চায় এই আসনে সাবেক সফল মন্ত্রী সালাহ উদ্দিন আহমেদ নির্বাচন করুক। সঠিক সময়ে আইনি জটিলতা কাটিয়ে দেশে ফিরতে পারলে তিনিই (সালাহ উদ্দিন আহমেদ) এই আসন থেকে লড়বেন, এমনটা সবার প্রত্যাশা। এখন সবাই দলের সিদ্ধান্তের দিকে চেয়ে আছে।’

পাঠকের মতামত: